নিজস্ব প্রতিবেদক:
তৈমূর আলম খন্দকার ও এ টি এম কামালকে দল থেকে বাদ দেওয়ায় আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে পাল্টে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র। তৈমূর আলম জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপিরও নেতৃত্বে ছিলেন। এ টি এম কামাল বিএনপির সঙ্গে যুক্ত দলটির শুরু থেকেই। নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তৈমূর আলম খন্দকার এবং এ টি এম কামাল পর্ব আপাতত শেষ। তাঁদের বাদ দিয়েই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে নতুন নেতৃত্ব দাঁড় করাতে মনোযোগী হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি গঠন করতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন।
১৮ জানুয়ারি তৈমুর আলমকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করার দিনই তাঁকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর তিন দিনের মধ্যে জেলার পাঁচটি থানা ও পাঁচ পৌরসভায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এখন থানা ও পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, নাসির উদ্দিনকে ৪৫ দিনের মধ্যে থানা ও পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য দলের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভোটাভুটির মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কমিটি না হওয়ায় ১৫ বছর ধরে দলে নতুন নেতৃত্ব আসছে না। আমরা আশা করছি, এবার জেলা ও থানা বিএনপির নেতৃত্বে নতুন মুখ বেরিয়ে আসবে।’
নাসির উদ্দিন জেলা বিএনপির আগের কমিটিতে সহসভাপতি এবং তৈমুর আলমের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটিতে দুই নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি তারাব পৌর বিএনপির সভাপতিরও দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি তারাব পৌরসভা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, সেটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন।
এর আগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে ওই পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম (রবি)। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগ দিয়ে মনিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার হন। এরপর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় নাসির উদ্দিনকে। ভোটের পর তৈমুর আলম ও তাঁর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল আছে।
তৈমূর আলম খন্দকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি দলের ভালো চাই। বহিষ্কার করা হলেও আমি দল ও নেতা-কর্মীদের পাশে থাকব সব সময়।’
আর এ টি এম কামাল বলেছেন, ‘আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আর সক্রিয় রাজনীতি করব না।’
তৈমূর আলম খন্দকার পেশায় আইনজীবী হলেও তিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জের শ্রমজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপিরও নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এ টি এম কামাল বিএনপির সঙ্গে যুক্ত দলটির শুরু থেকেই। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ দুজনের বাদ পড়ার পর পাল্টে যাচ্ছে বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র।
বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৈমুরকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহমুদকে সদস্যসচিব করে জেলা আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। তাঁরা এক বছরেও সম্মেলন করে কমিটি দিতে পারেননি। কেবল রূপগঞ্জ থানা কমিটিতে পছন্দের একজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার জন্য গোঁ ধরে তৈমূর সব থানা ও পৌর কমিটি আটকে দিয়েছিলেন। অবশ্য তৈমূর আলম কমিটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে আছেন দলের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম। ২০১৭ সাল থেকে তাঁর সঙ্গে মহানগরীর সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন এ টি এম কামাল। কামালকে বহিষ্কারের পর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে। তবে তৈমূর ও কামালকে বাদ দেওয়ার পরপরই জেলার ১০টি ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে তৈমুর আলমদের অনুসারী নেতারা অসন্তুষ্ট হলেও অন্য পক্ষ খুশি।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তৈমূর আলম এবং এ টি এম কামালের ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ। দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার বলার পরও তাঁরা নির্বাচন থেকে সরেননি। এর পেছনে সরকারি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে অন্য ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ ছাড়া এ টি এম কামাল দুই বছর ধরে ছিলেন বিদেশে, সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে তাঁর দেশে ফেরা এবং তৈমূরের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দলে নানা আলোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় এ দুজনকে আপাতত দলে ফেরানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদিও নারায়ণগঞ্জ মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে তৈমূর পরিবার এবং এ টি এম কামালের একটা অবস্থান ছিল। এখন তাঁদের বাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি কী করে, সেটিই দেখার বিষয়। যদিও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নাসির উদ্দিন ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ দাবি করেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। নেতাকর্মীরা অধিক সক্রিয় হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে দলের সাংগঠনিক চিত্র।